ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হলে তরুণদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি হবে:নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন
তরুণদের প্রত্যাশা কড়ায় গন্ডায় বুঝিয়ে দিয়ে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করবো। নতুন ভুল করবো না। কারণ এই জিনিসগুলো করলে মানুষ ধিক্কার দেবে। আমাদের সেই সুযোগই নেই। আমরা শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে দায়িত্ব নিয়েছি। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করবো না, দেশে সঠিক ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করবো।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) নগরীর নিউ ইস্কাটনে নিজ বাসভবনে এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
দায়িত্ব নিয়ে প্রথমে কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দেবেন?
তরুণদের প্রত্যাশা কড়ায় গন্ডায় বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো। জাতিকে যেন একটা অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ভোটাধিকার উপহার দিতে পারি। সর্বশক্তি দিয়ে এ চেষ্টা করবো। সবার সহযোগিতা নিয়েই আমি নির্বাচনটা করতে চাই। আমি মনে করি নিয়ত যদি সহি থাকে মনের মধ্যে ভেজাল যদি না থাকে তবে এ ধরনের কাজ করা সম্ভব। জাতি প্রমাণ করেছে সঠিক নির্বাচন করা সম্ভব। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে মানুষ কিন্তু তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে। তেমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করবো। সঠিক ভোট আয়োজনের সব সুযোগ আছে। আমরা নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। রাজনৈতিক দলগুলো বছরের পর বছর এই একটা দাবিতে লড়াই করেছে। সবাই যেহেতু চাচ্ছে সবাইকে নিয়ে এ কাজটি করবো।
বর্তমান সময়কে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
আমি তো আগে দায়িত্ব নেইনি, সুতরাং আগের কথা বলতে পারবো না। তাদের কী ধরনের চাপ ছিল তাও বলতে পারবো না। তবে আমি বুঝতে পারছি আমার দায়িত্বটা অনেক বেশি হবে। এটা কিন্তু বঞ্চনার ব্যাকগ্রাউন্ড! মানুষ যখন বঞ্চিত থাকে তখন প্রত্যাশা অনেক বেড়ে যায়। তবে চ্যালেঞ্জ নিয়ে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবো।
ইভিএম নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
মেয়র নির্বাচনে একবার ভোটকেন্দ্রে গেলাম সালটা মনে হয় ২০১৮ হবে। তখন এক ভদ্রলোক পাশে এসে বলেছিল স্যার আমাকে একটা ভোট দিয়েন। ইভিএম একটা টেকনিক্যাল বিষয়। এটার ভালো-মন্দ দিক নিয়ে আমি চিন্তা করিনি। কোন দেশে ইভিএম আছে বা নেই এটা নিয়েও আমি কিছু দেখিনি। আগে দায়িত্বটা নেই তারপর বোঝার চেষ্টা করি। তাছাড়া সংস্কার কমিশন কাজ করছে। বদিউল আলম মজুমদার সাহেব ভালো কাজ করছেন। তারা আমাদের অনেক কাজ সহজ করে দিচ্ছেন বা এগিয়ে দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগসহ সমমনা দলগুলোর নির্বাচনে আসা না আসা নিয়ে কী বলবেন?
এটা নিয়ে অনেক বিতর্ক হচ্ছে, আপনারা দেখছেন। বিতর্কের আগে ফয়সালা হোক, আপনারাও দেখবেন একটা মীমাংসা তো আসবেই। তবে এই মুহূর্তে আমি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি না।
ফ্যাসিবাদের দোসরদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখা হবে, না জনগণকে মূল্যায়নের ভার দেওয়া হবে?
এটা নিয়ে এই মুহূর্তে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এটার একটা ফয়সালা হবে নিশ্চয়। নির্বাচন সামনে, নিশ্চয় একটা সিদ্ধান্ত হবে। তখন আপনারা দেখতে পারবেন। তখন আপনারা দেখবেন আমিও দেখবো।
কোন বিষয়গুলোতে আপনি বেশি গুরুত্ব দেবেন?
আগে দায়িত্ব বুঝে নেই, তারপর দেখি। স্থানীয় নির্বাচন করতে গেলেও একই প্রস্তুতি লাগবে। সঠিক ভোটার তালিকা নিয়ে কাজ করতে হয়। পাঁচ থেকে ছয়টা ভোটার তালিকা করতে হয়, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, মেয়র থেকে শুরু করে নানা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে।
রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
পত্র-পত্রিকায় যা দেখছি রাজনৈতিক দলগুলো তাড়াতাড়ি নির্বাচন চাচ্ছে বলে আমার মনে হয়। মনে হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় নির্বাচন আগে চায়।নির্বাচনের কাজটা ইসি একা পারে না। ভোটের সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। ভোটার তালিকা করার একটা ব্যাপার আছে। জেন-জি আন্দোলন করলো, তাদের ভোটার করতে হবে ইত্যাদি নানা ধরনের কাজ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের জন্য রেডি করার চেষ্টা করবো। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্তে তিনি যাবেন না।
আমি তিনটি মন্ত্রণালয় চালিয়েছি। সবাই একদলের সমর্থক না। কেউ এই দলে দিয়েছে কেউ ওই দলে দিয়েছে। আমি আগে বুঝে নিই তারপর দেখবো। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ১ লাখ ৩০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে।
নতুন যারা নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন তাদের আপনি কতটা জানেন?
তাদের আমি চিনি না। আমি আপনাদের মতোই মিডিয়ায় দেখেছি। সবার সঙ্গে পরিচয় হবো। আমরা মিটিংয়ে বসবো। কাজ শুরু করলে বুঝতে পারবো কী কী সুবিধা-অসুবিধা আছে, কোথায় কোথায় গ্যাপ আছে। ধীরে ধীরে দিন যত যাবে ততই অভিজ্ঞতা হবে। আমার একটা বিশাল সুবিধা আছে সেটা হলো নির্বাচন সংস্কার কমিশন অনেক কাজ এগিয়ে দিয়েছে। ওনারাই সব কিছু রেডি করছেন আমাদের কোথায় কোথায় কাজ করতে হবে। কোথায় কোথায় গলদ আছে আমার আর গবেষণা করার দরকার হবে না।
নতুন এ দায়িত্ব কী চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করছেন?
এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই বড় চ্যালেঞ্জ। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাই। সাম্প্রতিককালে অনেক মানুষ শহীদ হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ পঙ্গু হয়েছেন। কারও চোখ চলে গেছে, কারও হাত কারও পা চলে গেছে। গত ১৫-১৬ বছরে কত লোক জান দিয়েছেন তা আমরা দেখেছি। অনেক মানুষ খুন হয়েছে, গুম হয়েছে, আমরা সবাই জানি। অনেকগুলো দাবির মধ্যে একটা মূল দাবি ছিল মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। মানুষ মুক্ত পরিবেশে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চেয়েছে।
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে মানুষ ভোটের অধিকার থেকে দূরে ছিল। যাদের বয়স ২০১৪ সালে ১৮ বছর ছিল তাদের বয়স এখন ২৮ বছর হয়ে গেছে। তারা কিন্তু ভোট দেওয়ার সুযোগটা পায়নি। আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিরাট একটা ক্ষোভ আছে। তরুণ প্রজন্মের আত্মত্যাগের অন্যতম লক্ষ্য কিন্তু ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের দায়িত্বটা অনেক বেশি। মানুষ অনেক রক্ত দিয়েছে। আমরা যদি ব্যর্থ হই তরুণদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। এদের রক্তের সঙ্গে মোনাফেকি করা হবে। এই বেইমানি আমরা করতে পারবো না। এই বয়সে এসে এই বেইমানি করার মতো মন-মানসিকতা আমাদের নেই।
আপনার সিইসি হওয়ার প্রস্তাবটা বিএনপি দিয়েছে এমন কথা শোনা যাচ্ছে?
কে প্রস্তাব দিয়েছে বা দেয়নি এটা আমার জানা নেই। এমনকি আমার কবে শপথ তাও জানি না। শুধু মিডিয়ায় দেখলাম খবরটি।