শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

ময়মনসিংহে বিএনপি নেতা কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা সংসদে তালা, মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্ছনার অভিযোগ

ইউটিভি ডেস্ক রিপোর্ট।। প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৫ জুন, ২০২৫, ৭:০৩ পিএম
ময়মনসিংহে বিএনপি নেতা কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা সংসদে তালা, মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্ছনার অভিযোগ

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক একেএম হারুন-অর রশিদ এর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্ছিত করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল কবীর রেনু, নূরুল হক ও শামস উদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাগরিবের নামাজ শেষে মুক্তিযোদ্ধাগণ এশার নামাজের জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন।

এসময় মৃত আব্দুল খালেক ওরফে কালু মিয়ার পুত্র বিএনপি নেতা ও পৌর বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি একেএম হারুন-অর রশিদ কয়েকজন সহযোগী নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ে প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং হুমকি দিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে যেতে বলে।

এসময় মুক্তিযোদ্ধাগণ এশা’র নামাজ পড়ে যাওয়ার কথা বললে বিএনপি নেতা হারুন বলেন, “কিসের নামাজ? এটা কি তোদের বাপ-দাদার সম্পত্তি? এখনি বের না হলে চর-থাপ্পর দিয়ে বের করে দেব।” এমনকি তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, “আর কোনো দিন যেন এই মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় অফিসে তোদের সহ কোন মুক্তিযোদ্ধাদের দেখতে না পাই।”

ঘটনার সময় বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ের কেয়ারটেকার শিমুল আহমেদ কাছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ের চাবি দিতে বলেন। চাবি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ের চাবি ছিনিয়ে নেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ কার্যালয় ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। পরে কার্যালয়ের তালা ঝুলিয়ে দেন অভিযুক্ত ঐ বিএনপি নেতা।

এ ঘটনায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরদিন ২২মে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও পৌর বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি একেএম হারুন-অর রশিদকে তলব করেন। পরে ঈশ্বরগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় (পুরাতন তিন তলা ভবন) এ তালাবদ্ধ করা ও তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অশ্লীল গালিগালাজ সহ ভয়ভীতি প্রদর্শনের বিষয়ে মৌখিক শুনানী করেন।

শুনানীতে এ.একে.এম হারুন অর রশিদ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ের জমিটি তাদের পূর্বপুরুষের দাবি করেন।

পরবর্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে অনাধিকার প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে দেন। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান। সেই সাথে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চাবি প্রশাসক হিসেবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের জমা রাখেন।

এবিষয়ে বিএনপি নেতা এ.একে.এম হারুন অর রশিদ এর বক্তব্য নিতে তার ব্যক্তিগত ০১৭১২★★★★৪৫ এবং ০১৮৪৯★★★★৭০ দুটি ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করা ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

উক্ত ঘটনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল কবির রেনু বলেন, আমাদের এটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান,বাজার কমিটির সভাপতি একেএম হারুনর রশীদ আমাদের দুই সদস্য কে মারধর করে অফিসে তালা লাগায়। পরে আমরা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছি।

উক্ত ঘটনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাবিবুর রহমান হলুদ বলেন, ৫ আগষ্টের পর থেকে আমাদের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে তালা দিয়েছে বিএনপির কিছু লোকজন। এখন পর্যন্ত তারা চাবিও দেয়নি এবং তালাও খুলে দেয়নি।আমরা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদে অভিযোগ দিয়েছি।

উক্ত ঘটনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক বলেন, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাজার কমিটির সভাপতি হারুনর রশীদ আমাদের জোরপূর্বক অফিস থেকে বের করে দেয় এবং পিয়নকে মারধর করে অফিসের চাবি কেড়ে নিয়েছে। পরে আমরা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গেলে তিনি বলেন আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক সানজিদা রহমান বলেন ওখানে দুইটা সমস্যা তার একটি অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই সমাধান করেছি। যারা চাবি নিয়েছিল তাদের থেকে আমি চাবি নেওয়ার এবং মামলা চলাকালীন সময় তারা আর আসবেন না মর্মে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছি। আইনগত ব্যবস্থা নিতে গেলে মুক্তিযোদ্ধারাই নিষেধ করেন।

মুচলেকা নেওয়ার পরও তারা এখনো মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও জানান, আমি এটা জানিনা, তবে সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধাগন জানালে ব্যবস্থা নিবো। মুক্তিযোদ্ধারা সম্মানের পাত্র তাই তারা একটা অভিযোগ দিলে অবশ্যই আমলে নিবো বলেও জানান।