দেশীয় ক্রিকেট কোচদের মধ্যে মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের পরিচিতি বা গ্রহণযোগ্যতা সর্বজনবিদিত। সামাজিক মাধ্যম বা সংবাদ সম্মেলনে অকপট কথা বলার জন্যও তার ‘খ্যাতি’ রয়েছে। এবার সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দেশের দুই শীর্ষ ক্রিকেট তারকার জন্য ঢাল হলেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সাকিব আল হাসানের ওপর ক্ষুব্ধ। তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে সংসদ সদস্য বনেছেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যখন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশে শতশত তাজা প্রাণ বলি হয়, তখন তারা টুঁ শব্দটিও করেননি। সে ক্ষোভ থেকেই তাদের দেশের ক্রিকেট থেকে একপ্রকার ‘অবাঞ্চিত’ করার পক্ষে একদল ক্রিকেটপ্রেমী।
তারা সাকিবের দেশে এসে টেস্ট খেলার বিরোধিতা করেছেন। মাশরাফির বিপিএলে খেলার বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছেন। আর এতেই পাল্টা ক্ষোভ ঝেরেছেন সাকিব-মাশরাফিদের কোচ হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) এক ‘জ্বালাময়ী’ ফেসবুক পোস্টে এই কোচ লিখেছেন, ‘দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি কখনোই এতো রাগ বা কষ্ট লাগে নাই, আজ কেন যেন লাগছে। আমরা মানুষ কি কখনও নিজেরা ভুল করি না? কেউ অনুতপ্ত হলে তাকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ, কিন্তু আমরা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি মানুষ হিসেবে, দয়া-মায়া জিনিসটা আমাদের মধ্যে থেকে উঠে গেছে।’
সাকিব-মাশরাফিদের কল্যাণমূলক কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে সালাউদ্দিন বলেন, ‘একটা মানুষ দেশের জন্য ১৭টা বছর কিছু না কিছু করেছে, আজ ক্রিকেটবিশ্ব আমাদের একটু সম্মান করে কাদের জন্য? তারা ক্রিকেট মাঠে নামতে পারবে না, এই কান্না তো সবাই দেখবে না। রাজনীতি করছে বলে এরা খুনি? এদের সাথে মিশেছেন? এরা কত মানুষের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে জানেন আপনি? এরা কত অসহায় মানুষের চিকিৎসা করাইছে সেটা কী জানেন?’
এরপর মাশরাফি, সাকিব, তামিমদের চোট নিয়ে খেলে যাওয়ার প্রসঙ্গও উঠে এসেছে সালাউদ্দিনের স্ট্যাটাসে, ‘তারা স্ট্যাটাস না দেওয়ার কারণে আজ শত্রু, যখন মাশরাফি ৫টা অপারেশন করে দেশের জন্য লড়াই করছে তা কী দেখছেন? সাকিব যে আঙুলে চিড় নিয়া বোলিং করে গেছে, তামিম এক হাতে ব্যাটিং করে গেছে কাদের জন্য? দেশকে সবাই কম-বেশি ভালোবাসে, এদের ভালোবাসাটা হয়তো দেখা যায়ও না, এদের কাছ থেকে দেখেছি, এরা মানুষের উপকার ছাড়া কারও ক্ষতি করেনি, এরা খুনি না। খুব কষ্ট পাচ্ছি মাঠ থেকে এদের বিদায় দেখতে পাব না। মানুষকে মাফ করুন, আল্লাহ আমাদের অনেক অপরাধ মাফ করে দেবেন। আমরা সবাই কম-বেশি অপরাধী, সম্মান কাউকে দিলে আপনিও সন্মানীত হবেন।’
প্রসঙ্গত, আগামী ২১ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়ার কথা ছিল সাকিবের। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে আপাতত দেশে ফেরা হচ্ছে না তার।