
ময়মনসিংহ বিভাগে প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাস। তাদের চিকিৎসার প্রধান কেন্দ্র ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (মমেক)। ময়মনসিংহ বিভাগ ছাড়াও কিশোরগঞ্জ, সুনাম, গাজীপুরসহ আশপাশের মানুষ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। মমেক হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ১২টি শয্যা রয়েছে। বিভাগের আর কোনো সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ নেই। এ নিয়ে রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিভাগের প্রায় দুই কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য সরকারি-বেসরকারি মিলে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শয্যা আছে ৩৫টি। এ হিসাবে প্রায় ৬ লাখ মানুষের জন্য আইসিইউ শয্যা মাত্র একটি। ফলে একটি শয্যা পেতে রোগীর স্বজনদের দুর্ভোগের কোনো শেষ থাকে না।
রক্তে ও ফুসফুসে ইনফেকশন এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাটের কৃষক আব্দুল কুদ্দুসের স্ত্রী সখিনা খাতুনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসক তাকে আইসিইউতে রাখতে বলেন। কিন্তু হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা ফাঁকা না থাকায় স্বজনরা বাইরের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরেও আইসিইউ শয্যা না পেয়ে রোগীকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে স্বজনরা ঢাকায় নিয়ে যান।
সখিনা খাতুনের ছেলে সাজেদুল আলম বলেন, ‘শহরের কয়েকটি হাসপাতালে ঘুরেও আইসিইউ জোগাড় করতে পারিনি। একটিও ফাঁকা ছিল না। ময়মনসিংহ মেডিক্যালে আইসিইউ ফাঁকা থাকলে মাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিতে হতো না। এ কারণে বাধ্য হয়ে ঢাকায় নিয়েছি। এটি শুধু আমার মায়ের বেলায় নয়, প্রত্যেক রোগীর ক্ষেত্রে ঘটছে। এজন্য জেলায় আইসিইউ শয্যা বাড়ানো জরুরি।’
শুধু সখিনার স্বজনদের নয়, হাসপাতালে একটি আইসিইউ শয্যার জন্য বেশির ভাগ রোগীর স্বজনদের প্রায় সময় একই অবস্থা। অবস্থা এমন হয়েছে, সব সময় আইসিইউতে রোগী থাকছে। অন্যদের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। ডাক্তারদের কিছুই করার থাকে না। কেউ সুস্থ হলে বা মারা গেলেই শুধু আইসিইউ শয্যা খালি হয়।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিভাগের নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুর সদর হাসপাতালে আইসিইউ সেবা নেই। এমনকি এসব জেলার বেসরকারি হাসপাতালেও আইসিইউ নেই। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ আছে ১২টি। এ ছাড়া নগরীর বেসরকারি প্রান্ত হাসপাতালে দুটি, স্বদেশ হাসপাতালে তিনটি, সায়েম হাসপাতালে তিনটি, নেক্সাস হাসপাতালে দুটি ও সিবিএমসিবি হাসপাতালে রয়েছে ১৩টি আইসিইউ শয্যা। এ নিয়ে বিভাগের চার জেলার ২ কোটি মানুষের জন্য আইসিইউ রয়েছে মাত্র ৩৫টি। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি সব হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর দাবি রোগীর স্বজনসহ সচেতন নাগরিক সমাজের।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় মহাপরিচালক বলেন, ‘দক্ষ জনবলের অভাবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যা বাড়ানো সম্ভব হয়নি। তবে আগামী দিনে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আইসিইউ শয্যা বাড়ানো হবে তিনি জানান।’
সূত্র: ইত্তেফাক